২৯ সেপ, ২০২১

সূরা ইখলাসের ফজিলত।



সূরা আল ইখলাস এর অর্থ হল নিষ্ঠা‎, একেশ্ব‌রবাদ, বিশুদ্ধ। সূরা আল ইখলাস পবিত্র কুরআনের ১১২ তম সূরা। আয়াত সংখ্যা ৪, রুকু ১টি।  সূরাটি মক্কায় অবতীর্ণ হয় তাই এই সূরা মাক্কী সূরার শ্রেণীভুক্ত। এই সূরাকে ক্বুল হু আল্লাহু আহাদ হিসাবেও উল্লেখ করা হয়ে থাকে। সূরাটি ছোট হলেও এর গুরুত্ব ও তাৎপর্য অনেক অনেক বেশি। এই সূরাটি হল পবিত্র কুরআন শরীফের তিন ভাগের এক ভাগ।  অর্থাৎ কেউ যদি তিন বার সূরা ইখলাস পাঠ করে তাহলে ১ বার কুরআন খতমের সাওয়াব পাবে। সুবহানাল্লাহ। কেন এই সূরাটি এতো ফজিলতপূর্ণ? তার কারণ হল এই সূরাতে আল্লাহ তার নিজের পরিচয় দিয়েছেন এবং তার পাশাপাশি আল্লাহর বৈশিষ্ট্যের কথা বলা হয়েছে। ছোট এই সূরা কম বেশি প্রত্যেক মুসলিম ভাই ও বোনদের মুখস্ত আছে কিন্তু আমরা অনেকেই এর অর্থ ও গুরুত্ব তেমন জানি না।  আমার এই পর্বে সূরা আল ইখলাস এর অর্থ ও এর ফজিলত এবং এর শানে নুযুল সম্পর্কে জানব ইনশাআল্লাহ। 

শানে নুযুল

একবার কিছু মুশরিকরা নবী মুহাম্মদ (সঃ) এর কাছে আল্লাহর বংশ পরিচয় জানতে চাইলো। আল্লাহ সম্পর্কে তারা নানাধরণের আপত্তিকর কথা বলতে লাগলো। কোনো কোনো রেওয়ায়েতে আছে যে, তারা জানতে চাইলো আল্লাহ কিসের তৈরী? স্বর্ণ-রুপা নাকি অন্যকিছুর। তখন সূরা ইখলাস নাজিল করে আল্লাহ নিজেই এর উত্তর দিলেন। 
সূরা আল ইখলাস এর অনুবাদ 
১) قُلْ هُوَ اللَّهُ أَحَدٌ
কু’ল হুয়া ল্লা-হু আহাদ
বলো, তিনিই আল্লাহ্‌, অদ্বিতীয়!
২) اللَّهُ الصَّمَدُ 
আল্লা-হু স্‌সামাদ
আল্লাহ অমুখাপেক্ষী
৩) لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُولَدْ 
লাম ইয়ালিদ ওয়া লাম ইয়ুলাদ
তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং কেউ তাকে জন্ম দেয়নি।
৪) وَلَمْ يَكُن لَّهُ كُفُوًا أَحَدٌ 
ওয়া লাম ইয়াকু ল-লাহু কুফুওয়ান আহাদ!
তার সমকক্ষ আর কিছুই নেই!

সূরা আল ইখলাস নিয়ে কিছু কথা  

১. সূরাটি শুরু করা হয়েছে "কু’ল" শব্দটি দিয়ে যার অর্থ "বলো"।  এখানে আমাদের সাবধান থাকা উচিত কু’ল শব্দটি যেন গলার গভীর থেকে উচ্চারিত হয়। আর তা না করা হলে এর অর্থ পরিবর্তন হয়ে যাবে।  শুধু ‘কুল’ অর্থ হলো "খাও"।  সুতরাং বুঝতেই পারছেন এর উচ্চারণটা কতটা গুরুত্বপূর্ণ।
২. পুরো সূরাটিতে একটি মাত্র যের রয়েছে (يَلِدْ) . আল্লাহ এখানে বলেছেন তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং কেউ তাকে জন্ম দেয়নি। আল্লাহ কতো বৈজ্ঞানিকভাবে এতো অল্প কথায় মানুষের সৃষ্টির পক্রিয়ার কথা বলেছেন। প্রশ্ন আসতেই পারে কিভাবে? আসুন একটু ব্যাখ্যা করা যাক।  ইয়ালিদ ( يَلِدْ ) থেকে যদি আপনি উপররে দিকে যান তাহলে ২৩ টি পৃথক অক্ষর পাবেন। আর নিচের দিকে যান ২৩ টি পৃথক অক্ষর পাবেন। আর বিজ্ঞান বলে যে মানুষ সৃষ্টি হয় ২৩ জোড়া ক্রোমোসোম থেকে। তিনি (আল্লাহ) কাউকে জন্ম দেননি এবং কেউ তাকে জন্ম দেয়নি। এটা বলে বুঝানো হল ২৩ জোড়া ক্রোমোসোম এর সাথে আল্লাহর কোন সম্পৃত্ততা নেই। এখানেই শেষ নয়। আপনি যদি ইয়ালিদ ( يَلِدْ ) থেকে উপর দিকে যান ৭টি শব্ধ পাবেন আর নিচের দিকে গেলে ৭টি শব্ধ পাবেন। আর সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেছে মানুষ মাতৃগর্ভে ৭টি পর্যায়ে গঠিত হয়। দেখুন পাঠকগণ, আল্লাহ কতো জ্ঞানী হলে এতো বিজ্ঞানসম্মতভাবে ছোট একটি সূরাতে আল্লাহর নিজের পরিচয়ের পাশাপাশি মানুষ সৃষ্টির পক্রিয়া সম্পর্কে বলতে পারেন।
অনেক অমুসলিমরা প্রশ্ন করে থাকেন প্রত্যেক জিনিসেরইতো স্রষ্টা থাকে। তাহলে আল্লাহকে কে সৃষ্টি করেছে? আসলে এই প্রশ্নটির কোনো ভিত্তি নেই। আসলে বলা উচিত প্রত্যেক সৃষ্টির স্রষ্টা রয়েছে। আল্লাহ কাউকে জন্ম দেন নি আর কেউ তাকে জন্ম দেন নি।  
৩. সূরা ইখলাসে এরকম দুটি শব্দ আমরা পাই, যা পুরো কু’রআনে মাত্র একবার করে এসেছে, শুধুমাত্র সূরা ইখলাসে। শব্দ দুটি হল : কুফু ও আস-সামাদ। কু’রআনে আর কোনো কিছুর বেলায় এই শব্দ দুটো ব্যবহার করা হয়নি।

ফজিলত 

১. হযরত আবু হোরায়ারা (রাঃ) বর্ণনা করেন, একবার রসুলুল্লাহ (সাঃ) বললেনঃ তোমরা সবাই দলবদ্ধ হয়ে যাও আমি তোমাদেকে পবিত্র কোরানের এক তৃতীয়াংশ শুনাবো। তারপর সবাই একত্রিত হল এবং রসুলুল্লাহ (সাঃ) সূরা ইখলাস পাঠ করে শুনালেন। এরপর বললেন রা ইখলাস পবিত্র কোরানের এক তৃতীয়াংশ।  (মুসলিম, তিরমিযী)
২. আবু দাউদ, তিরমিযী ও নাসায়ীর এক দীর্ঘ রেওয়ায়েতে রসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ যে ব্যক্তি সকাল-বিকাল সূরা ইখলাস, ফালাক্ব ও নাস পাঠ করে তা তাকে বিপদ-আপদ ও শয়তানের খারাপই থেকে বাঁচিয়ে রাখার জন্যে যথেষ্ট হয়। - (ইবনে-কাসীর)
৩. ওকবা ইবনে আমের (রাঃ)-এর রেওয়ায়েতে রসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ আমি তোমাদেরকে এমন তিনটি সূরা বলছি, যা তওরাত, ইঞ্জীল, যবুর ও কোরআনসহ সব কিতাবেই রয়েছে। রাতে তোমরা ততক্ষণ নিদ্রা যেও না, যতক্ষণ সূরা এখলাস, ফালাক ও নাস না পাঠ কর। ওকবা (রাঃ) বলেনঃ সেদিন থেকে আমি কখনও এই আমল ছাড়িনি। - (ইবনে কাসীর)
৪. যে ব্যক্তি অধিক পরিমানে সূরা ইখলাস পাঠ করবে আল্লাহ তায়ালা তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব করে দিবেন।
৫. যে ব্যক্তি সূরা ইখলাস অধিক পরিমাণ পাঠ করবে আল্লাহ তায়ালা তাঁর লাশ বহন করার জন্য ফেরেশতা হয়রত জিবরাঈল (আঃ) এর সাথে সত্তর হাজার ফেরেশতা প্রেরন করবেন। সেই ফেরেশতারা তাঁর লাশ বহন করবে এবং জানাজায় শরিক হবে।
৬. রাসুল (সাঃ) এর সময় একবার এক এলাকার একজন ইমাম সাহেবের নামে বিচার আসলো। বিচারের দাবী ছিল যে সেই সাহাবী প্রতি ওয়াক্ত নামাজে শুধু সূরা ইখলাস পড়ত। এই প্রসঙ্গে সেই সাহাবীকে তিনি জিজ্ঞেস করলে সাহাবা উত্তরে বললেন, হে আল্লাহর রাসুল (সাঃ) সূরা ইখলাসে আল্লাহর পরিচয় বর্ণিত আছে এ কারণে এ সূরাকে আমি অনেক ভালবাসি। তাই আমি সব নামাজে এই সূরা পড়ি।
এই কথা শুনে আল্লাহ রাসুল (সাঃ) কিছু বলার আগেই আল্লাহ বলে পাঠালেন যে শুধু তার সূরা ইখলাসের প্রতি এই ভালবাসাই তার জন্য জান্নাত নিশ্চিত করে দিয়েছে।

১৮ সেপ, ২০২১

দু'টি আংগুরের বাগান- কবিতা

 (আল কুরআন, সুরা ১৮-আল কাহফ ৩১-৪৪ অবলম্বনে)

বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম। 

-------

আল্লাহ বলেন,খেজুর গাছে ঘেরা দু'টি আংগুর বাগান

পানির নহর দিয়ে তাতে করেছি  ফল উৎপাদন। 

গরিব বাগান মালিকেরে অহংকারে বলে,

ধনে-জনে  শক্তিশালী আমি,তোমাকে পিছনে ফেলে।

আমার এ বাগান কখনো না ধংস হবে,

আমি মনে করি না কখনো কিয়ামত সংঘটিবে।

তার সাথী তাকে বলে,যে আল্লাহ সৃজিয়াছেন তোমায়,

মাটি,শুক্রানু হতে মানুষরুপে তাকে ভুলে গেলে হায়।

তিনিই আল্লাহ, আমার রব আমি ভুলি নাই তাকে,

শরীক করি না তার সাথে কোন কিছুকে।

"মাশা আল্লাহ" বললে না যে, বাগানে প্রবেশ কালে, 

যে কারনে বাগানের ফলকে বিপর্যয়ে ঘিরে ফেলে,

অহংকারী বলল হায়, হল সর্বনাশ আমার,

বুঝেছি সব কর্তৃত্ব সব কিছু সত্যবাদী আল্লাহর।




১৫ সেপ, ২০২১

বেরসিকের টুকরো খবর ১৫০৯২০২১

  অনেক দিন পর বেরসিকের পুরাতন কথা নতুনভাবে মনে পড়ায় কষ্ট অনুভব করলো। দীর্ঘদিন ধরে স্ত্রী বলছিল আমার ছেলেরা বড় হলে তোমার সাথে আর আমি নাই। ক'দিন ধরে স্ত্রী বেশ ঝামেলা পাকাচ্ছে এবং খুব অসন্তোষ প্রকাশ করছে। 

বেরসিক ভাবছে সেই পুরাতন পরিকল্পনা নতুন করে নয় তো। আবার এটাও ভাবছে তার ছেলেরাও তো বড় হয়েছে। 

আবার ভাবছে আল্লাহ যা করবেন তা তার মংগলের জন্যই। 





৩ সেপ, ২০২১

গুহাবাসী-কবিতা

 (আল কুরআন, ১৮-আল কাহফ (১-১১) অবলম্বনে)

বিসমিল্লাহ বলে শুরু, সব প্রশংসা আল্লাহর, 

যিনি বক্রতাহীন কুরআন দিয়েছেন প্র‍য়োজনে বান্দার।

যাতে রয়েছে বিপদ কাফেরের,মুমিনের উত্তম পুরস্কার, 

কাফের জ্ঞানহীন, মিথ্যাবাদী বলে সন্তান আল্লাহর। 

হে নবী (সঃ) তারা ঈমান না আনলে,

তোমার জীবন কি দিবে সংকটে ফেলে।

আমি তো সৌন্দর্য ময় যমীন দিয়ে,

পরীক্ষা করছি কে উত্তম আমলে?

এ মাটি কিয়ামতে করিব উদ্ভিদশূন্য খাটি,

আমার বিস্ময়কর নিদর্শন গুহাবাসী।

গুহায় আশ্রয়ী যুবকগণ বলে হে রব, 

দান কর রহমত,পূর্ণ করো মোদের কাজকর্ম সব। 

তারপর তাদের ঘুমিয়ে রাখলাম ৩০৯ বছর, 

একটি কুকুর ও ছিল তাদের সহচর। 

এ নিয়ে তর্ক করো না তারা ছিল ক'জন,

হে নবী, বল তা জানেন আমার আল্লাহ মহান।



১৫ আগ, ২০২১

আমার মা- কবিতা

 আত্নীয়দের মধ্যে যত শ্রেষ্ঠ আমার মা, 

মায়ের স্মৃতি কখনো যে ভুলতে পারিনা। 

অতীত স্মৃতি মনে করে,  হৃদয়ে মোর কাপন ধরে, 

মা যে আমার কষ্ট করে তুলে রাখত খাবার  ভরে,

 স্কুল থেকে ঘরে ফিরে, ছেলে আমার খাবে কিরে?

আরো আগের কথা তো আর বলার মত নয়, 

বয়স আমার দশ কি বারো মারা গেলেন বাবায়!

আটটি মোরা ভাইবোনে, 

কষ্ট দিয়ে মায়ের মনে, 

ক্ষেতের কাজ ফেলে রেখে,

  স্কুলফিরে খেলতে গেছি মাঠে।

তিনটি আমার ভাই বোন,  চলে গেল পরপারে!

মায়ের কত দুঃখ মনে, গড় গড়িয়ে অশ্রু ঝরে!

এখনকার সব মেয়েদের মত,

ক্লান্ত হতে দেখিনি তো।

এমন আমার শ্রেষ্ঠ 'মা' যে

চলে গেলেন ২০২০ ২২ শে মে।

আল্লাহ আমার মা-বাবারে, 

সুখে রেখ কবরে। 





Feartured Post

কর্মের ফলাফল নিয়তের উপর নির্ভর করে।

  কর্মের ফলাফল নিয়তের উপর নির্ভর করে।

জনপ্রিয় পোস্ট