১২ ফেব, ২০২১

আমার অবসরজনিত বিদায়ী বক্তব্য



আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ। 
অদ্যকার বিদায়ী সভার সভাপতি মাননীয় উপ-মহাব্যবস্থাপক ও উপস্থিত সহকারী মহাব্যবস্থাপক এবং আমার শ্রদ্ধেয় ও প্রাণপ্রিয় কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ। 
অদ্যকার বিদায়ী সভা বদলি জনিত  নয়, অবসরজনিত। তাই আমার মন ভারাক্রান্ত। এ প্রতিষ্ঠানে আর কাজ করতে আসব না। কিন্তু দীর্ঘ ৩২ বছর কর্মজীবনের প্রতিষ্ঠান এবং এর সহকর্মী ভাই-বোনদের এত ভালোবেসে ফেলেছি যে ছেড়ে যেতে মন চায় না কিন্তু নিয়ম এটাই। কোন অকর্মণ্য মানুষ বা কর্মীকে প্রতিষ্ঠানে কেন আল্লাহ দুনিয়ায় ও রেখে দেন না অনন্ত কাল। আমার কর্মজীবনের অল্প কিছু ঘটনা তুলে ধরতে চাই। 
১৪/১২/১৯৮৯ তারিখে ফরিদপুর আঞ্চলিক কার্যালয়ে আমি যোগদান করি। 21/12/ 89 এ প্রথম যেদিন অগ্রণী ব্যাংক ভাংগা শাখা, ফরিদপুরে যোগদান করি একজন গার্ড যে ক্যাশিয়ার কে টাকা গণনায় সহযোগিতা করত, আমাকে হাতে ধরে টাকার বান্ডিল কিভাবে গুনতে হয় শিখিয়েছিল। সেই মুজিবুর রহমানকে আজও ভুলতে পারিনি। আল্লাহ তার আত্মার শান্তি দিক। 
এখানকার আরো দুটো ঘটনা না বললেই নয়।
 ১) একবার এক ঠকবাজ একজন বৃদ্ধকে ছোট নোট (10 টাকার নোট) বড় নোট করে দেবে (100 টাকার) নোট এ  বদল করতে গিয়ে ঠকাচ্ছিল। কিন্তু আমাদের ক্যাশ কালাম ভাই নামে পরিচিত সহকর্মী বিষয়টি টের পেয়ে ধরে ফেলেন। 
২) অন্য ঘটনা দুঃখজনক। মাদারীপুরের এক ঠকবাজ ভাঙ্গা থানায় গ্রাম্য লোকদের নিয়ে একটি সমিতি গঠন করে। ঋন দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে সঞ্চয়ী হিসাব খুলে অল্প অল্প করে টাকা জমাতে থাকে। বলেছিল যা জমাবেন তার তিনগুণ ঋণ দিবেন। এদিকে একাউন্ট খোলার সময় সমিতির লোকদের থেকে দুজনের নামে হিসাব খুললেও কোন এক ফাঁকে নিজেই স্বাক্ষর  করে নমুনা স্বাক্ষর কার্ড এ। সমিতির লোকদের যখন ৪০/৫০ হাজার টাকা জমে তখন মাদারীপুর শাখার একটি চেকে টাকা লিখে ওদের দেয় আনার জন্য  । ওরা ওখানে গিয়ে দেখে হিসাবে মাত্র ৮০ টাকা আছে। নিয়মবহির্ভূত চেক বই প্রদান এবং ভাঙ্গা শাখার হিসাব খোলার দায়িত্ব অবহেলায় সর্বনাশ হল। এদিকে ঠকবাজ জমানো টাকা ভাঙ্গা শাখা থেকে তুলে নিয়ে চম্পট দেয়। 
আমাদের ব্যাংকের লোকদের দ্বারা ও অনেক জালিয়াতির ঘটনা দেখেছি যা আমাদের প্রধান কার্যালয়ের নেতা বা স্যারদের অবহেলায় দুষ্কৃতকারী  পার পায় এবং নতুন ঘটনা ঘটে। 
একবার পি সিএমডি কার্যালয়ের তারেক স্যার কে জিজ্ঞাসা করেছিলাম ব্যাংকে কর্মরত চোর কেন রক্ষা পায় ?উনার জবাবে আমি খুশি হই নি। উনি জবাব দিয়েছিলেন সাথে অনেক নিরীহ কর্মকর্তা-কর্মচারীর ক্ষতি হয় তাই ছাড়া পায় ছোটখাটো শাস্তির বিনিময়। 
যাহোক আমি কুর্মিটোলা শাখায় ৩১/০৭/২০০৭ এ যোগদান করে ক্যাশ সেকশনে দু'বছর এবং জেনারেল ব্যাংকিং ও পেনশন সেকশনে ৬ বছর থাকার পর 2015 সালে আর্মি পেনশন সেলে আসি। আমার দীর্ঘ কর্ম জীবনের সবচেয়ে বেশি সময়ের সাথী হিসেবে পেয়েছি যাদের তারা হলেন-মোঃ হাবিবুর রহমান ভাই, মোঃ রেজাউর রহমান ভাই,  মোঃ আক্তারুজ্জামান ভাই এবং মোঃ নজরুল ইসলাম স্যার। দীর্ঘ ৯ বছর এদের সাথে চাকরি করে এদের সাথে আমার কখনও মনোমালিন্য হয়েছে বলে আমার মনে পড়ে না। তবুও যদি কখনো কষ্ট দিয়ে থাকি ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি যাতে পরকালে  ঠেকে না যাই । এদের কাছ থেকে কম্পিউটার বিষয়ে, ধর্মীয়   বিষয়ে এত অনুপ্রেরণা পেয়েছি যা আমার আমৃত্যু  মনে থাকবে। তাছাড়া যাদের সাথে কাজ করেছি এবং একসাথে চলাফেরা করেছি যদি কোনো কারণে কাউকে মনের অজান্তে বা জেনে কষ্ট দিয়ে থাকি ক্ষমা করে দিবেন এবং দোয়া করবেন আল্লাহ যেন আমাকে মাফ করে দেন। 
আমরা মুসলমান এবং আমাদেরকে কেন আল্লাহর হুকুম পালন করতে হবে এ বিষয়ে আমরা সবাই অনেক কিছু জানি। কিন্তু আমার কাছে যা মনে হয় তা হল - আল্লাহ সূরা মূলক এ উল্লেখ করেছেনঃ- বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম।
 আয়াত (১) "অতি মহান ও শ্রেষ্ঠ তিনি( আল্লাহ) যার হাতে রয়েছে সমগ্র বিশ্ব জাহানের কর্তৃত্ব। তিনি সবকিছুর উপর ক্ষমতাবান। 
আয়াত (২)ঃ- কাজের দিক দিয়ে তোমাদের মধ্যে কে উত্তম তা পরীক্ষা করে দেখার জন্য তিনি মৃত্যু ও জীবন সৃষ্টি করেছেন। আর তিনি পরাক্রমশালী ও ক্ষমাশীল ও। 
আয়াত (৩)ঃ-তিনিই স্তরে স্তরে সাজিয়ে সাতটি আসমান তৈরি করেছেন। তুমি রহমানের সৃষ্টিকর্মে কোন প্রকার অসঙ্গতি দেখতে পাবে না। আবার চোখ ফিরিয়ে দেখো কোন ত্রুটি  দেখতে পাচ্ছো কি? "

আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নাই। এ কথার সাথে যুক্তি প্রমাণ ও দেখিয়ে দিচ্ছেন যে তিনিই একমাত্র উপাস্য, সর্বশক্তিমান। কুরআন-হাদিস অনুযায়ী আমরা জীবন যাপন করলে আল্লাহ আমাদের ক্ষমা করবেন। না হলে দোজখের আজাব এত ভয়াবহ তা কল্পনাও করা যায় না। কারণ আমাদের আত্মার বিনাশ নেই। এ বিষয়ে আল্লাহ বারবার সতর্ক করেছেন  । 
আর আল্লাহ আমাদের সকল কাজ দেখছেন। আমাদেকে অসৎ কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে।

   আর সময় নেবো না। আপনাদের ও আমার অবশিষ্ট জীবন ও পরকালের জীবন সুন্দর, সুখী ও মঙ্গলময় হোক এ কামনা করে শেষ করছি। 
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ। 
 

বিদায়ী স্যারের উদ্দেশ্যে বক্তব্য।




অদ্যকার বিদায়ী সভার সভাপতি মাননীয় উপ-মহাব্যবস্থাপক, উপস্থিত সহকারী মহাব্যবস্থাপক এবং আমার শ্রদ্ধেয় ও প্রাণপ্রিয় কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ। 
অদ্যকার বিদায়ী স্যার জনাব মোঃ লোকমান হোসেন বদলী জনিত কারণে আমাদের মাঝ থেকে তার নতুন কর্মস্থলে যাবেন। আমাদের সাথে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন নিরলস ও দক্ষতার সাথে। তার কাজের প্রতি আগ্রহ গুছিয়ে কাজ করার এবং প্রতিষ্ঠানের প্রতি আন্তরিকতার ঘাটতি ছিল না। তার কাছ থেকে অনেক কিছু শিখতে পেরে আমি গর্বিত। বিদায়ী স্যার কে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই আল্লাহ আমাদের সৃষ্টি করেছেন এবং মৃত্যু ও জীবন সৃষ্টি করেছেন আমাদেরকে পরীক্ষা করার জন্য। কাজে ও কর্মে আমরা কে উত্তম যার বিচার-বিশ্লেষণ তিনি কেয়ামতের দিনে করবেন এবং পুরস্কার দিবেন। আল্লাহ ওয়াদার খেলাফ করেন না। 
আমাদের নিয়োগকৃত  কর্তৃপক্ষ ভালো কাজই চান। যদিও সব মন্দ কাজ গুলো কর্তৃপক্ষ দেখতে পান না কিন্তু আল্লাহ দেখতে পান।
 বিদায়ী স্যারের প্রতি ছোট্ট একটা অনুরোধ- কখনো হতাশ হবেন না। আল্লাহর রহমত থেকে কাফের- মুনাফিক ছাড়া কেউ হতাশ হয় না। 
পরিশেষে বলব, দীর্ঘ কর্মজীবনে স্যারকে কোন প্রকার কষ্ট দিলে তা ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন এবং নতুন কর্মস্থলে এবং পারিবারিক জীবনে সুন্দর ও সুস্থ কর্মময় সময় কাটুক আল্লাহর কাছে এই দোয়া করি। দুনিয়া ও আখেরাতের মঙ্গল কামনা করে আমি আমার বক্তব্য শেষ করছি।  
আসসালামুআলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ। 

৫ ফেব, ২০২১

বেরসিকের টুকরো খবর

 । বেরসিকের আতংক, কি জানি কখন মেজাজ বিগড়ে যাবে। ঃ-

একবার বেরসিককে তার স্ত্রী বলল, আমার গামছা কেউ ব্যবহার করবে না। ঠিক ঠিক বেরসিক স্ত্রীর গামছা ব্যবহার করেনি। দুদিন পর স্ত্রী দেখল সে গামছা ব্যবহার করেনি। সে অমনি গামছাটা টেনে ছিড়ে ফেলল। এবং বলল, আমি বলেছি আর তাই তুমি গামছা ব্যবহার করনি আমি ও ব্যবহার করবো না। 

৪। বেরসিকের দুর্দিন ঃ

  করোনার ঊর্ধ্বগতির  মধ্যে বেরসিক অফিস বন্ধ করে বাড়ি চলে যায়। কয়েকদিন পর অফিসের বড় বস ফোন করে বললেন অনেক দিন ছুটি হয়ে গেল। আপনি তাড়াতাড়ি অফিসে যোগ দেন। এদিকে যোগাযোগ ব্যবস্থা খুবই খারাপ। স্ত্রী বলল, আরো একদিন থেকে যাও। বেরসিক এতে স্ত্রীকে বকা দিল।আর তাতেই হল সর্বনাশ । বেরসিকের স্ত্রী প্রায় এক সপ্তাহ হল কথা বন্ধ করে দিয়েছে। 

বেরসিক অফিসের উদ্দেশ্যে পরের দিন ভোর চারটায় অটো রিকশা নিয়ে যাত্রা শুরু করে ১৪০ কিলোমিটারের পথ। পরে ফেরি, কুরিয়ার সারভিসের গাড়ি, রিকশা,বাস এবং হেটে ই ঢাকায় পৌঁছান। 

এদিকে স্ত্রী বলেছে বেরসিক চাকুরী থেকে অবসর না নেওয়া পর্যন্ত কথা বলবেনা। আর বেরসিক ভাবছে চাকরি থাকা কালিন এমন ব্যবহার। চাকরি না থাকলে তো পাত্তাই দিবে না। বুড়ো বয়সে এ জ্বালা সহ্য হবে তো?  


 

Feartured Post

কর্মের ফলাফল নিয়তের উপর নির্ভর করে।

  কর্মের ফলাফল নিয়তের উপর নির্ভর করে।

জনপ্রিয় পোস্ট